Wednesday, February 10, 2021

Filled Under:

The Liberation War

 

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে এক নবদিগন্ত উন্মোচনকারী ঘটনা। আমাদের এই উপমহাদেশ দীর্ঘদিন ছিল পরাধীন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
ভাষা আন্দোলন
ফলে এই অঞ্চলে সামাজিক জাগরণ এবং শিক্ষা-দীক্ষার তেমন প্রসার ঘটেনি। পূর্ববাংলার অবস্থা ছিল আরও করুণ। কারণ বৃটিশ ভারতের প্রথম রাজধানী কলকাতার পশ্চাৎভূমি হিসাবে এই অঞ্চল ছিল আরও পশ্চাৎপদ। তবে এ অবস্থার মধ্যেও ঔপনিবেশিক শাসন-শোষন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অঞ্চলে যে-সব কৃষকবিদ্রোহ হয়েছে তাতে জাগৃতির উপাদান সঞ্চিত হচ্ছিল। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববাংলার বাঙালির জাতিসত্তা গঠন এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে আকস্মিক ছেদ পড়লেও ১৯৪০-এর দশক থেকেই তা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকারের সংগ্রাম এবং সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা ধীরে ধীরে গভীরতা অর্জন করে। এই ধারাটি ১৯৬০-এর দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংগ্রামের সর্বোচ্চ স্তরে উত্তীর্ণ হয়। এরই ধারাবাহিক পরিণতি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীকালে পূর্ববাংলার নবজাগ্রত বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়। এই ঘটনাকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে নবদিগন্ত উন্মোচনকারী বলে আখ্যায়িত করেছি। মাত্র কয়েকটি লাইনে আমরা দীর্ঘ সময়কালের ইতিহাসের একটি অতি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেছি। এর প্রতি স্তরে অসংখ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ঘটনাপ্রবাহ এবং তার অভিঘাতে সৃষ্ট নানা পরিস্থিতির মোকাবেলা করে বাঙালি শেষ পর্যন্ত তাদের অশেষ সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রটি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বাঙালির দুই-আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের মধ্যে অটুট ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন ঘটনা সৃষ্টির আর নজির নেই। এক্ষেত্রে এই অঞ্চলের নির্যাতিত-নিপীড়িত দুঃখী মানুষের জীবনপণ সংগ্রাম এবং বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বেরও আর কোনো তুলনা আমাদের ইতিহাসে নেই।  

আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ মাত্র নয় মাসে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এই নয় মাসকে সৃষ্টি করেছে আরও কতদিন, কতমাস তার খুঁটিনাটি তথ্য এখনও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চের পর  থেকে শুরু হলেও এর পটভূমিগত একটা ইতিহাস আছে। সে ইতিহাস যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তাৎপর্য বোঝা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের এই পটভূমিকার সূচনাবিন্দু কখন  ইতিহাসকারদের মধ্যে কেউ কেউ তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক ১৭৫৭ সাল থেকেই এই সময়কাল নির্ধারণ করতে চান। কেউ কেউ মনে করেন, না, অত পেছনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ১৯০৫ সাল থেকে অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল, সেখান থেকেই বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়েছে বলে কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিকই ১৯৪৮-৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকেই আমাদের মুক্তিসংগ্রামের শুরু বলে মনে করেন। তাঁরা বলেন, এর আগে আর কখনও বাঙালি জাতিসত্তা এতটা তৃণমূলস্পর্শী এবং সর্বব্যাপক হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আমরা এই মতের গুরুত্ব উপলব্ধি করেও আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে আর একটু পেছনে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি। আমাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সূচনা পর্ব হিসাবে ১৯২০-এর দশককে নির্ধারণ করাই যথাযথ। আমাদের এই মতের পক্ষে যুক্তি হলো, ১৯২০-এর দশক বাংলার ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের জন্য এই দশক অনন্য। কারণ এর আগে ১৯০৫ সালে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূত্রপাত তাতে নেতৃত্ব ও আধিপত্য সবটাই ছিল উচ্চশিক্ষিত নগরবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের। বাঙালি মুসলমান এই আন্দোলনে তেমন অংশগ্রহণ করেনি। ফলে ইংরেজ আমলে সৃষ্ট বাংলার অসম বিকাশের (uneven development) কারণে বাংলার হিন্দু ও মুসলমান একই জাতীয় চেতনা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। নগর সমাজের ওপরের স্তরে শুধু হিন্দু ভদ্রলোকশ্রেণীর মধ্যেই বাঙালি জাতীয়তার চেতনা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধের (১৯১৪) পর বাঙালির বিশেষ করে পূর্ববাংলার বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে মূল্যবোধগত একটা পরিবর্তন দেখা দেয়। নগদ অর্থের অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে পূর্ববাংলার কৃষিজীবী মুসলমানদের মধ্য থেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল কিছু মানুষ নানাভাবে যুদ্ধজনিত অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে গ্রামীণ বাংলাদেশের কৃষক সমাজের মধ্য থেকে নতুন একটি শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে উঠতে থাকে। ১৯২১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই তৈরি হতে থাকে আগামী দিনের নব আলোকবার্তাবাহীরা। এরাই ধীরে ধীরে গ্রামে এবং শহরে-বন্দরে তাদের অবস্থান সৃষ্টি করে নিতেও সক্ষম হয়। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মেও তাদের আনাগোনা শুরু হয়। এর ফলে বাংলার রাজনীতিতেও একটা মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। মুসলিম নবাব নাইটদের জায়গায় কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা আইনজীবী বা অন্য পেশার মুসলমানেরাই রাজনীতিতে বিশেষ সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন। চিত্তরঞ্জন দাশের রাজনৈতিক চুক্তি (Bengal Pact) মুসলিম মধ্যবিত্তকে বিকাশের একটা পরিসর দেয়। এর প্রভাব ব্যাপক বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও পড়তে শুরু করে। পরে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও নিজ হাতে রাখেন। এতে দ্রুত বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একটি আধুনিক মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠে। এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশের দশক থেকে ত্রিশের দশকের এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করে।  

  1. এছাড়াও ১৯২০-এর দশকে সাহিত্যক্ষেত্রে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব এক যুগ পরিবর্তনকারী ঘটনা। এই প্রথম বাঙালি মুসলমান ব্যাপকভাবে বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাদান বাংলা সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর আগে বাংলা সাহিত্যে মুসলিম উপাদান খুব নগণ্যমাত্রায় ছিল বলে বাঙালি মুসলমান এতে কোনো আগ্রহ বোধ করেনি। কিন্তু নজরুল বাংলা সহিত্যে বিপুল মুসলিম উপাদান এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু ও বিশ্বপুরাণ এবং ঐতিহ্যের নিপুণ প্রয়োগ ঘটানোয় ব্যাপক বাঙালি মুসলমান বাঙালিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। এতে হিন্দু ও মুসলিম বাঙালির মধ্যে অসম অর্থনৈতিক বিকাশজনিত যে পার্থক্য ও বৈষম্য ছিল তা কিছু পরিমাণে হ্রাস পায় এবং নজরুল হয়ে ওঠেন বাঙালির জাতীয় কবি। নজরুলের আবির্ভাবের এই চেতনা বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে গভীরতর মাত্রা যোগ করেছে। অতএব নজরুলের ঐতিহাসিক আবির্ভাবকালের এই সমাজিক জাগরণ, অপূর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পূর্ণতা দানের প্রয়াস এবং অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠনমূলক সাহিত্যকে বাদ দিলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এমনকি আন্তর্জাতিক মানবিক চৈতন্যে ভাস্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াসও কঠিন হয়ে পড়তো। নজরুল বলেছিলেন, বাংলা বাঙালির হোক, বাংলার জয় হোক। নজরুলের ভাঙার গান-এ  (১৯২২), পূর্ণ অভিনন্দন শীর্ষক কবিতায় ‘জয় বাংলা’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে। এই ‘জয় বাংলা’ই ছিল মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির এক বিরাট শক্তিশালী অস্ত্র। এইসব ঘটনাকে বাদ দিলে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে বোঝা কি সম্ভব? এছাড়া ১৯২১ সালে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। এই পার্টির প্রগতিশীল ভূমিকাও যে নতুন বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজে নব চেতনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেনি এই কথাও তো বলা যাবে না।  

এই প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনাও উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১৯২৬ সালে ঢাকায় যে মুসলিম সাহিত্যসমাজ গড়ে ওঠে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক ও যুক্তিবাদী রাষ্ট্র গঠনে তার ভূমিকাও গুরুত্ব বহন করে। অতএব ১৯২০-এর দশক বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে যে অসাধারণ পটভূমিকায় ভূমিকা পালন করেছে তা বাদ দিলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস রচনা অসম্পূর্ণ থাকবে।

দুই.
  • এবার আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার বিষয় নির্বাচন এবং সমস্যা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস রচনার সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। প্রথম কথা হলো, বাংলার ঐতিহাসিকেরা এতোটা বিশাল এবং সম্পূর্ণ নতুন ঘটনাসম্পন্ন ইতিহাস রচনা এর আগে করেননি। এই ইতিহাস রচনার পদ্ধতি কি হবে সে ব্যাপারেও কোনো প্রখ্যাত পণ্ডিত এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য দিক নির্দেশনা দেননি। অতএব এই ইতিহাস রচনায় কী প্যারাডাইম (paradigm) ব্যবহৃত হবে সে প্রশ্নও আছে। প্রচলিত প্যারাইডাইমশিফ্ট তো হতেই হবে। কিন্তু সেটা কোন ধরনের? এই ইতিহাস যথাযথভাবে তৃণমূল পর্যায় থেকে লিখতে হলে এবং এর অনন্য স্রষ্টা কৃষক-সন্তান ও ব্রাত্যজনের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে হলে ফিল্ডওয়ার্ক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। ইতিহাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষকেরা এ ধরনের কাজও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত করেননি। সাধারণ মানুষের বীরত্ব, সাহসিকতা এবং জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করার অনন্য শৌর্যকে তুলে ধরতে হলে মাঠ পর্যায়ে বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান অতি জরুরী। সেই কাজ ঐতিহাসিকেরা যে করবেন সে-রকম প্রশিক্ষণওতো আমাদের ঐতিহাসিকদের নেই।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ইতিহাস রচনার জন্য নানা বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস লেখাই যথাযথ হবে। অনেকেই এই পদ্ধতিকে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেন না। তারা বলেন, এভাবে ইতিহাস লিখলে তাতে শুধু সামরিক বাহিনীর গুরুত্বই প্রাধান্য পাবে। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন ২১টি জেলাকে ধরেই তৃণমূল পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং তার প্রামাণিকরণের ভিত্তিতেই ইতিহাস লেখা সমীচীন। এতে ঐতিহাসিকদের ইতিহাস রচনায়ও একটি নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ফিল্ডওয়ার্কভিত্তিক ইতিহাস তো হতেই হবে। তাছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা এবং বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে আটক থাকা সত্ত্বেও তিনি যে বাস্তবের প্রমাণসাইজের মানুষের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিলেন এবং হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার এক অসাধারণ প্রতীক তাঁকেও যথাযথ মাত্রায় ধারণ করতে হবে। যুদ্ধ হয়েছে বহু স্তরে এবং বহু স্থানে। যুদ্ধ কোথাও সরাসরি, কোথাও পরোক্ষ, কোথাও গেরিলা পদ্ধতিতে। এই বিষয়গুলোকেও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যে আনতে হবে। এই যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা, ভারত সরকারের ভূমিকা, শরণার্থী সমস্যা, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাংলাদেশে অবরুদ্ধ মানুষ পাকিস্তানে আটকেপড়া সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ, প্রবাসী বাঙালিদের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পুলিশ, ইপিআর, সেনা, নৌ-কমান্ডো এবং নারীদের অবদানও চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে জনযুদ্ধ ছিল এ-সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। গ্রামবাংলার কৃষক-ক্ষেতমজুর এবং ব্রাত্যজনের ভূমিকাই ছিল প্রধান। এদের অসংখ্য বীরত্বব্যঞ্জক ঘটনাকেও তুলে ধরতে হবে। আমরা আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধকে ব্রাত্যজনের এবং সাধারণ মানুষের যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করি। কিন্তু এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর বাইরের কোনো সাধারণ মানুষ বা ব্রাত্যজন কেন বীরশ্রেষ্ঠ হতে পারলেন না? ঐতিহাসিকদের কাছে মানুষ সে প্রশ্নেরও জবাব প্রত্যাশা করে। অতএব মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করতে হবে বহুমুখী দৃষ্টিকোণে এবং বহুমাত্রিক অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে।


0 comments:

Post a Comment